অপরাজিত গোকুলামের দৌঁড় থামাতে চায় চট্টগ্রাম আবাহনী

প্রথম সেমিফাইনাল সন্ধ্যা সাতটায়

একেবারে শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রাম আসে ভারতের আই লিগের দল শ্রী গোকুলাম কেরালা এফসি। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে ঢাকা আবাহনী খেলতে না আসায় তাদের জায়গায় তড়িঘড়ি করে নিয়ে আসা হয় গোকুলামকে। এসে চট্টগ্রামের মাটিতে অনুশীলনের সুযোগও পায়নি তারা। অনুশীলন ছাড়াই মাঠে নেমে বাংলাদেশ লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে নিজেদের ঝাঁজ বুঝিয়ে দিয়েছিল ভারতের ড়ুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়নরা। গুণে গুণে বসুন্ধরার জালে বল জড়িয়েছিল তিনবার। এরপর বাকি দুটো ম্যাচেও নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়ে টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে নাম লেখায় তারা। অন্যদিকে প্রথম দু`ম্যাচে দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে জয়ের পর সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা চট্টগ্রাম আবাহনী নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে হোঁচট খায় মোহনবাগানের সাথে।

চট্টগ্রাম এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাতটায় গোকুলাম কেরালাকে প্রথম হারের তিক্ত স্বাদ দিয়ে ফাইনালে নাম লেখাতে চায় টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। আগের সূচিতে ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল বিকেল ৪টায়। পরিবর্তিত সূচি অনুযায়ী ম্যাচ শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।

একদম শেষ মুহূর্তে এসে তৃতীয়দফা সূচি পরিবর্তন করায় ক্ষমা চেয়েছেন টুর্নামেন্টের প্রধান সমন্বয়কারী তরফদার রুহুল আমিন। জানিয়েছেন, চার সেমিফাইনালিস্ট দলের সম্মতিতেই হয়েছে এ পরিবর্তন। সূচি পরিবর্তন হওয়ায় একদিকে সুবিধাই হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনীর। বিকেলের তপ্ত রোদের চেয়ে সন্ধ্যার কোমল আলোতে ৩০ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন স্টেডিয়ামে বরং বেশি দর্শক আসবে বলে মত আয়োজকদের।

কোচ মারুফুল হক ও অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়াও চাচ্ছেন স্বাগতিক দর্শকদের সমর্থন। অধিনায়কের মতে দর্শকরাই মাঠের দ্বাদশ খেলোয়াড়। ‘দর্শকরা হচ্ছেন ম্যাচের দ্বাদশ খেলোয়াড়। তারা আমাদের সমর্থন দেবেন, আমাদের জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করবেন। আমরা এতে বাড়তি অনুপ্রেরণা পাবো।’

দর্শক যদি চট্টগ্রামের শক্তি হয়, তাতে ঘাবড়ে যাবে না তো গোকুলাম? গ্রুপপর্বে অপরাজিত থাকা দলটির স্প্যানিশ কোচ ফার্নান্দো সান্তিয়াগোর দাবি, এরচেয়ে বেশি দর্শকের মাঝেই খেলে অভ্যস্ত তার দল, ‘ডুরান্ড কাপে আমরা ৪০ হাজারেরও বেশি দর্শকের মাঝে খেলেছি। পুরো গ্যালারি ভর্তি ছিল মোহনবাগানের সমর্থকে। আমরা এর মাঝেও শিরোপা জিতেছি।’

চাপ যে গোকুলাম নিতে জানে সেটা টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচেই প্রমাণ করে দিয়েছে তারা। কোনরকম অনুশীলন ছাড়াই নেমে বসুন্ধরাকে উড়িয়ে দিয়েছে। দলটির আক্রমণভাগ সম্পর্কে ভুল ধারণা করেছিলেন কিংসদের কোচ অস্কার ব্রুজেন। নামিয়েছিলেন মাত্র ৩ ডিফেন্ডার। সেই ভুলের মাশুল গুণতে হয়েছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের। বাদ পড়েছে গ্রুপপর্ব থেকেই।

ভয়ঙ্কর এক আক্রমণভাগ নিয়ে এবারের আই লিগ শুরু করার অপেক্ষায় গতবার নয়ে থাকা দলটি। আই লিগকে সামনে রেখে ৩ মাস একসঙ্গে অনুশীলন করেছে তারা। উগান্ডান ফরোয়ার্ড হেনরি কিসেক্কা আর ত্রিনিদাদ এন্ড টোবাগোর মিডফিল্ডার নাথানিয়েল গার্সিয়ার মাঝে বোঝাপড়াটাও বেশ। মাঠের বাইরে দুজন ভালো বন্ধুও। দলের আসল ফরোয়ার্ড মার্কাস লেরিককে প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচে নিয়মিত খেলাননি কোচ। ডুরান্ড কাপের ৫ ম্যাচে ১১ ও আই লিগে ১৪ ম্যাচে ১৮ গোল করা ফরোয়ার্ড সেমিতে থাকতে পারেন মূল একাদশে। নিতে পারেন চট্টগ্রামের ডিফেন্ডারদের পরীক্ষা।

মাঝমাঠ থেকে গোকুলমের ফরোয়ার্ডদের বলের যোগানটা বন্ধ করে দেয়ার দায়িত্ব সামলাতে হবে জামালকেই। প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের নিয়ে আলাদা সেশন করেছেন কোচ মারুফুল। মাঠে ভালোমত সেটি কাজে লাগাতে চান চট্টগ্রাম অধিনায়ক, ‘ওরা সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে মাঝমাঠে। ওদের এখান থেকে বলের যোগানটা নষ্ট করতে হবে। ওদের বিদেশি খেলোয়াড়রাও বেশ ভালো। নাথানিয়েল গার্সিয়া, হেনরি কিসেক্কারা বেশ ভালো ফুটবলার। ওরা বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে ৩ গোল দিয়েছে। গোকুলম বেশ কঠিন এক দল, বিশেষ করে ওদের ফরোয়ার্ডরা। কোন জায়গায় ওরা বেশি বিপজ্জনক সেটা নিয়েই কাজ করেছি।’

প্রতিপক্ষকে সমীহ করলেও ঘাবড়ানোর পাত্র নন মারুফুল। গ্রুপপর্বে ৮ গোল করা দলটাকে গোকুলাম বাধা পেরিয়ে তুলতে চান ফাইনালে, ‘ওদের দলটা দারুণ। তিন বিভাগেই ওরা দারুণ ফুটবল খেলে। অনেক অভিজ্ঞ ফুটবলার ওদের দলে। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও মনমতো করতে পারে। তার মানে এই না যে ওরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। চট্টগ্রাম আবাহনী প্রথম দুই ম্যাচেই নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছে। তৃতীয় ম্যাচে পরিকল্পনা অন্য ছিল, নইলে ওই ম্যাচেও আমরা ভালো করতে পারতাম। আমরা আশাবাদী যে গোকুলামকে হারাতে পারবো।’

সেটপিসে বেশ ভয়ঙ্কর গোকুলাম, বিশেষ করে নাথানিয়েল গার্সিয়া। ত্রিনিদাদের এ মিডফিল্ডার বসুন্ধরার বিপক্ষে ফ্রি-কিকে করেছিলেন দারুণ এক গোল। চেন্নাই এফসির বিপক্ষে তার সেটপিস থেকেই গোল পেয়েছিলেন হেনরি কিসেক্কা। তাই গার্সিয়ার ফ্রি-কিক থেকে বাঁচতে বিশেষ পরিকল্পনার কথাও জানালেন মারুফ, ‘ওরা কেবল এক ধরনেরই সেটপিস করে না। ওদের এখানে বৈচিত্র্য আছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করেছি। দেখা যাক মাঠে খেলোয়াড়রা কতটুকু কাজ করতে পারে।’

তবে প্রতিপক্ষ যেমনই হোক না কেনো তা নিয়ে ভাবতে রাজি নন জামাল। প্রতিপক্ষ যেই হোক, তাদের গুঁড়িয়ে ফাইনাল খেলার ব্যাপারে বেশ আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক। অধিনায়কের আত্মবিশ্বাসের ঝলক মাঠে দেখা গেলে টুর্নামেন্টের তৃতীয় আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠবে চট্টগ্রাম আবাহনী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!