চট্টগ্রাম কলেজ/ অন্তর্কোন্দলে মাথা ফাটলো ছাত্রলীগ নেতার, আসামি শিবির নেতারাও

0

দলীয় কোন্দলের জেরে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের স্থগিত হওয়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের ওপর হামলা হলেও মামলায় আসামি করা হয়েছে কলেজ ছাত্রশিবিরের কর্মীদের। যদিও ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করেছিল চন্দনপুরার আব্দুর রউফ নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার অনুসারীরা সবুজের ওপর হামলার করেছিলেন। ছাত্রলীগ যদিও ফেসবুকে শিবিরকে দায়ী করে আসছে। আর পুলিশ বলছে, মামলার তদন্তের পরই জানা যাবে কারা এ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

এর আগে বুধবার (২৬ জুন) সন্ধ্যায় সুভাষ মল্লিক সবুজের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি নিজেই গত রাতে বাদি হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাত আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নামীয় ৩১ জনের মধ্যে ছাত্রশিবির কর্মী হিসেবে যে চারজনের নাম রয়েছে তারা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর শিবিরের (উত্তর) সভাপতি রায়হান, মহানগর শিবিরের আইনবিষয়ক সম্পাদক জোবায়ের, চট্টগ্রাম কলেজ শিবিরের সভাপতি ফখরুল, চট্টগ্রাম কলেজ শিবিরের আরেক সভাপতি ইমন আশরাফ।

s alam president – mobile

এজাহারে বাদি সুভাষ মল্লিক উল্লেখ করেন, ‘বুধবার রাত ৮টা ৪৫ মিনেটে বেলাল নামের চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক এক ছাত্র আমাকে কিরিচ দিয়ে মাথার বাম পাশে আঘাত করে। তারপর সালাহউদ্দিন নামে আরেক সাবেক ছাত্র লোহার রড দিয়ে বুকে আঘাত করলে আমি মাটিতে পড়ে যাই। বেলালের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে হামলা করে। এরপর খবর পেয়ে আমার রাজনৈতিক সহকর্মীরা দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।’

তবে গতকাল বুধবার রাতে ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেছিলেন, ‘চন্দনপুরার রউফ বাহিনী আমার কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজের ওপর হামলা চালিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সবুজ চমেকে চিকিৎসাধীন। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাই এবং দল থেকে বহিস্কারাদেশ চেয়ে উর্ধ্বতন সংগঠনকে অনুরোধ জানাবো।’

এর একদিন পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাহমুদুল করিম বলেন, ‘আমরা সবুজের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনকে তিন দিনের সময় বেধে দিয়েছি। তিন দিনের মধ্যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।’

Yakub Group

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবারও (২৭ জুন) ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ওই দিন চকবাজারের স্থানীয় দোকানদার ও পথচারীরা জানিয়েছিল, এ ঘটনা নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দলের কারণে সংঘটিত হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতিসহ অনেকেই ছাত্রলীগের মেয়র গ্রুপের কর্মীদেরই দায়ী করেছিলেন। কিন্তু মামলার আসামিতে ৩১ জনের মধ্যে নামধারী শিবিরের চারজনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানার জন্য সবুজ মল্লিকের কাছে জানতে ফোনে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এজাহারে নাম উল্লেখ থাকলেও তদন্ত করে বলা হবে কারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। তবে সবুজ সোহরাওয়ার্দী ছাত্রাবাসের সামনে ৭-৮ জন ছেলেসহ বসেছিলেন। এ সময় বেলালের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন যুবক সবুজের মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা জয়নগর ও চকবাজার এলাকায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে কয়েকটি দোকানের কাঁচ ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।’

জানা গেছে, হামলায় নেতৃত্বদানকারী মো. বেলাল সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং সিআরবির জোড়া খুনের আসামি সাইফুল ইসলাম লিমনের অনুসারী। চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাইফুল ইসলাম লিমন নগরীর রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বর্তমান সভাপতি মাহমুদুল করিম যুবলীগের বিতর্কিত নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী। আর সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ আরেক বিতর্কিত যুবলীগ নেতা নুর মোস্তাফা টিনুর অনুসারী। তাদের দুজনের সঙ্গেই মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের বিরোধ আছে।

এইচটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!