বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। শুক্রবার (১০ মে) বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদেরকে তিনি একথা জানান। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হয়ে গেলে চট্টগ্রামে চিকিৎসা সেবায় আর কোন সমস্যা থাকবে না বলেও মনে করেন ডা. মুরাদ হাসান।
চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ এখন আর সময়সাপেক্ষ কিছু নয়। এটা অনেক দূর এগিয়েছে। আপনারা সরেজমিনে দেখতে যান।’
চমেক হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক নিউরোসার্জারি ওয়ার্ড খোলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও আমাদের জায়গার সংকট। নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা বলেছি, ‘‘দেশের প্রত্যেকটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করবো।’’ চট্টগ্রামে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। আপনাদের চাহিদা পেডিয়াট্রিক সার্জারি শুধু না, এমন কোন ডিসিপ্লিন বা সাব- ব্র্যাঞ্চ বা সুপার স্পেশালাইজড ডিপার্টমেন্ট বা ইউনিট নাই যেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে না। সবকিছুই হয়ে যাবে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেলে সব সার্জারি, সব ডিসিপ্লিন হয়ে যাবে চট্টগ্রামে।’
চমেকে হাসপাতালে আইসিইউতে স্বল্প শয্যাসংখ্যার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কলেজের জন্য দশ তলা ভবন হচ্ছে। এখানে আসন সংখ্যা বাড়ানো এবং অবকাঠামো কিভাবে বাড়ানো যায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এখন হয়েছে। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক আইসিইউ হবে। বেড়ের সংখ্যাও অনেক বেশি থাকবে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে বিশাল, ব্যাপক আকারে। শয্যাসংখ্যা বাড়তি শুধু না, আইসিইউ, সিসিইউ সবই অনেক বেশি থাকবে। রোগীদের চিকিৎসার সমস্যা আশা করি থাকবে না।’
এ সময় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মহসেন উদ্দিন আহমেদ মন্ত্রীকে বলেন, ‘আমাদের আইসিইউতে ১২ বেড সক্রিয় আছে। কিন্তু রান করার মতো জনবল নেই আমাদের। বেড দিলেই হবে না, ম্যানপাওয়ারও লাগবে।’
বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে হৃদয় রোগ বিভাগে অনেক রোগী এবং তাদের সেবা নিয়োজিত হৃদয় রোগ বিশেষজ্ঞের সংখ্যা বেশ ভালো। এখানে এনজিওগ্রাম, বাইপাস সার্জারি, বাল্ব রিপ্লেসমেন্ট, রিং বসানো হচ্ছে। ঢাকার বাইরে এসব সুবিধা শুধু চট্টগ্রামে আছে। অন্য বিভাগগুলোও ভালো আছে।’
‘অনকোলজি বিভাগে ৬০টির উপরে মেশিন আছে। এখানে ডে কেয়ার কেমোথেরাপি রেগুলোর হচ্ছে। লেনিয়ার এক্সিলেটর মেশিনের চাহিদা আছে এই বিভাগে। আমরা সেই অত্যাধুনিক লেনিয়ার এক্সিলেট মেশিন এখানে দিবে বলে কথা দিয়েছি। এখানে ৮০০ থেকে ১৩০০ শয্যা। কিন্তু রোগী আছে প্রায় ৩ হাজারের মতো। আমাদের জায়গা ও বেড সংকট আছে। হাসাপাতালে শয্যা সংখ্যা কিভাবে বাড়ানো যায়, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।
হাসপাতালের জনবল সংকট সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জনবলের সংকট সারা দেশেই আছে। সারাদেশে পাঁচ হাজার ডাক্তার আমরা সম্প্রতি নিয়োগ দিয়েছি। তাদের পদায়ন হলে ডাক্তার সংকট কিছুটা কমবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয়বার সরকার গঠনের পর আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল হাসপাতালগুলোর জনবল সংকট দ্রুত সমাধান করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা।’
এর আগে ডা. মো. মুরাদ হাসান পৌনে চারটার দিকে চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি অ্যান্ড ট্রমাটোলজি বিভাগ, হৃদয় রোগ বিভাগ এবং রেডিও থেরাপি বিভাগ পরিদশন করেন। এ সময় তিনি চিকিৎসাধীন রোগীদের সাথে কথা বলেন। রেডিও থেরাপি বিভাগ পরিদর্শনকালে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ প্রতিমন্ত্রীর কাছে চমেকে একটি লেনিয়ার এক্সিলেটর প্রদানের অনরোধ জানান। চমেক হাসাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এমএ/সিপি