অনুপ্রবেশকারীর তালিকা নিয়ে রহস্য, অন্ধকারে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ

অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে তুলে দিলেও এক সপ্তাহেও চট্টগ্রামে সেই তালিকা আসেনি। ফলে চট্টগ্রামের তিন সাংগঠনিক জেলায় মোট কতজন অনুপ্রবেশকারীর নাম রয়েছে এবং কারা রয়েছে তা নিয়ে অন্ধকারেই রয়েছেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

দলীয় সূত্র বলছে, ১ নভেম্বর রাতেই দলীয় সভানেত্রীর পক্ষ থেকে দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ ও এনামুল হক শামীমের কাছে চট্টগ্রাম বিভাগের তালিকা হস্তান্তর করেছেন। তবে এই তালিকায় চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে কতজন অনুপ্রবেশকারীর নাম রয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি দুই নেতার কেউই। অন্যদিকে এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চট্টগ্রামের নেতাদেরও তা হস্তান্তর করা হয়নি। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, তালিকা ধরে যাচাই বাছাই চলছে এবং তা সাংগঠনিক প্রক্রিয়াতেই সম্পন্ন করা হবে।

তালিকা প্রসঙ্গে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রস্তুতের কথা শুনলেও কেন্দ্র থেকে সেই ধরনের কোনও তালিকা আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি এখনও।’

একই কথা বলেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদুল আলম সুজনও। অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম বলেন, ‘আমি ঢাকায় আসছি। পার্টি অফিসে হানিফ ভাইসহ সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গে দেখা হয়েছে বাট এ বিষয়ে কোনও কথা হয়নি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে একাধিক বার মোবাইল করা হলেও আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে গত ৩ নভেম্বর রাতে শামীম বলেছিলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা আমরা পেয়েছি। আমরা দেখি যাচাই-বাছাই শেষে তালিকা দেখে সংশ্লিষ্ট জেলা ও মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে পাঠাব। তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আওয়ামী লীগে এক হাজার ৫০০ অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দলে অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করিয়েছেন। তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। সেখানে তালিকাভূক্ত কেউই যাতে স্থান না পায়, সেই ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা যাচ্ছে তৃণমূলে।

অনুপ্রবেশকারীদের তালিকায় কারা রয়েছে তা উল্লে­খ করতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে যারা আসে, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত ভূমিদস্যু, যাদের ইমেজ খারাপ, যাদের রাজনীতি জনগণের কাছে খারাপ— এ ধরনের অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা প্রধানমন্ত্রী নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করেছেন এবং তার কাছে এই তালিকা আছে।’

দলীয় সভানেত্রী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও নিজস্ব লোক দিয়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের এই তালিকা তৈরি করেন। ৯ কলামের এই ছকে প্রথম কলামে ক্রমিক নম্বর রয়েছে। দুই নম্বর ছকে নাম ও ঠিকানা। তিন নম্বর ছকে আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে কোন সংগঠনের সঙ্গে ছিলেন এবং পদবি কী ছিল। চতুর্থ ছকে রয়েছে যোগদানকৃতদের বংশ পরিচয় ও রাজনৈতিক তথ্য। পঞ্চম ছকে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা। ষষ্ঠ ছকে রয়েছে আওয়ামী লীগের যোগদান করার পর পদ-পদবি। সপ্তম ছকে রয়েছে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর কোনও পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে কিনা। অষ্টম ছকে রয়েছে মামলা সংক্রান্ত তথ্য। নবম ছকে রয়েছে মন্তব্য।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!