অনিশ্চিত প্রত্যাবাসন/ সাক্ষাতকারে অনাগ্রহ রোহিঙ্গাদের
অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। ২২ আগস্ট ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরৎ পাঠানোর জন্য যে তালিকা করা হয়েছিল ঐ তালিকার মাত্র ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কাছে সাক্ষাতকার দিতে আসেন।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক মতামত যাচাই বা সাক্ষাতকার নেওয়ার প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ১০-১৫ জন রোহিঙ্গা সাক্ষাতকারে আসলেও তারা মিয়ানমার ফেরৎ যাওয়ার অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবারের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও।
সূত্রমতে, বরাবরের মতোই এবারও কিছু এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বানচাল করতে কাজ করেছে। যে কারণে মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসনে সম্মতি প্রকাশ করার পরও বেশিরভাগ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরৎ যেতে সাক্ষাতকারে হাজির হয়নি।
টেকনাফের জাদিমুড়া শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন বলেন, প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গা নারী-পুরুদের ঘরে ঘরে গিয়ে তাদের সাক্ষাতকার দিতে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে মাত্র কয়েকজন সাক্ষাতকার দিতে গেলেও বাকিরা যায়নি।
প্রত্যাবাসন তালিকায় নাম থাকা এক রোহিঙ্গা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘সকালে ক্যাম্প ইনচার্জের প্রতিনিধিরা ঘরে এসেছেন। তারা বলেছেন তালিকায় আমার পরিবারের নাম রয়েছে। সাক্ষাৎকার দিতে বিকালে ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু আমরা মিয়ানমারে ফেরত যাবো না। যে দেশ থেকে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে এসেছি, সেখানে ফিরে যেতে চাই না। নির্যাতনের বিচার পেলেই কেবল ফিরে যাবো।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, প্রত্যাবাসনের জন্য তিন হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে। এদের ৯০ ভাগ বসবাস করেন টেকনাফের ২৬ নম্বর ক্যাম্পে। এছাড়া বাকিরা থাকেন ২৭ ও ২৪ নম্বর ক্যাম্পে। এদের মধ্যে অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গা আছেন নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে। সবকটি ক্যাম্প কাছাকাছি হওয়ায় যাতায়াতের সুবিধার্থে ২৭ নম্বর ক্যাম্পের সিআইসি কার্যালয়ের পাশেই সাক্ষাতকার নেওয়ার স্থান ঠিক করা হয়েছিল।
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা রহিম উল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রথম বৈঠকে যে দাবী দাওয়া দেওয়া হয়েছিল। তার একটিও মেনে নেয়নি মিয়ানমার। যে কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যেতে প্রস্তুত না।
এদিকে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল ২০ আগস্ট সারাদিন নানা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি অলস সময় কাটিয়েছেন সাক্ষাতকার নেওয়ার স্থানে। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই সময় প্রাণে বাঁচতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। পুরনো ও নতুন মিলিয়ে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন।
জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭।
এএইচ